জনপ্রিয় সংবাদ
- রাজনীতি
- ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মাহাথির মোহাম্মদের দীর্ঘ ও সফল জীবনের রহস্য
- বাংলাদেশ
- ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
নওগাঁয় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- রাজনীতি
- ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
বিএনপির দলছুট সাত্তারকে জেতাতে সরে দাঁড়াচ্ছেন আ.লীগের তিন নেতা
- বাংলাদেশ
- ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মার্কিন তালিম নিয়ে মেয়র দেশে ফিরলে মশক নিধনে নতুন সিদ্ধান্ত
সর্বশেষ ভিডিও
- জীবনযাপন
- ০১ জানুয়ারি, ২০২৪
নারীরাই বেশি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে
পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই ঝুঁকি আরো বেশি স্থুল নারীদের ক্ষেত্রে। স্বাভাবিক ওজনের নারীদের তুলনায় স্থুল নারীদের উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি দ্বিগুন। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে নারীদের ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ কমে যাওয়াও একটা অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদেও মতে, পুরুষের তুলনায় নারীর ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস কম হওয়ার কারণে পুরুষের চেয়ে নারীর আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার ৮ শতাংশ বাড়বে। আর একই বয়সী নারীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার বাড়বে ১৩ শতাংশ।
২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ নারীর ওভার ওয়েট অ্যান্ড ওবিস। আর ৩৫ বছরের উর্ধ্বে নারীদের ৫৮ শতাংশে ওভার ওয়েট বা ওবিস।
‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’ অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭-১৮ সাল সময়ের মধ্যে, ৩৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পুরুষের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশে এবং নারীর ক্ষেত্রে এই হার ৩২ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক ওজনের পুরুষদের উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার হার ২৪ শতাংশ আর স্থুল পুরুষদের এই হার ৪২ শতাংশ। দ্বিগুনের একটু কম। এছাড়া স্বাভাবিক ওজনের নারীদের আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশ এবং স্থুল নারীদের এই হার প্রায় দ্বিগুন; ৪৯ শতাংশ। স্বাভাবিক ওজনের নারীপুরুষের তুলনায় স্থুল নারী-পুরুষের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেক বেশি।
বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়, যা সকল সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি। বাংলাদেশও উচ্চ রক্তচাপের নীরব মহামারির মধ্যে রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো: খালেকুজ্জামান বলেন, আমরা ২০১৫ সালে বস্তিবাসীদের লাইফস্টাইল নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলাম। হাইপারটেনশন দেখেছি, ডায়বেটিস দেখেছি। সেখানে দেখলাম ৪০ শতাংশ নারীর ওভার ওয়েট অ্যান্ড ওবিস। এগুলো ভেরি শকিং না!
অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া, বাংলাদেশ এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, একটা সমস্যা ভয়াবহ ভাবে দেখা দিয়েছে। তা হলো অনেক মানুষ মোটা হয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে তিনটি মহামারি চলছে। এর মধ্যে স্থুল হয়ে যাওয়া একটা। কোটি কোটি মানুষ মোটা হয়ে যাচ্ছে। অন্তত ছয়টা দেশে সুগার ট্যাক্স বসানো হয়েছে। কার্বোহাইডকে বলা হচ্ছে দ্য হোয়াইট পয়জন। কাজেই আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নারীদের উচ্চ রক্ত চাপের আক্রন্ত হওয়ার সংখ্যাটা অনেক বেশি।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটল অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম জোয়াদ্দার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, নারীরা বেশি স্ক্রীনিংয়ে আওতায় আসেন, যেকারণে তাদের চিহ্নিত বেশি হয়। একজন নারী যখনই গর্ভবতী হন, চিকিৎসকের কাছে গেলে তখনই তিনি স্ক্রীনিংয়ের আওতায় চলে আসেন। কোনো শারীরিক সমস্যায় পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে আসেন। তার মানে নারীর স্ক্রীনিং বেশি হচ্ছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, মোট জনসংখ্যার পুরুষের চেয়ে নারী বেশি। পুরুষ ৪৭ শতাংশ এবং নারী ৫৩ শতাংশ। মানসিক চাপতো রয়েছেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন, খাদ্যের সাথে অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার, তামাক ও অ্যালকোহল সেবন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে। অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে যেমন, শারীরিকভাবে কর্মঠ না থাকা, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়া। এছাড়াও পারিবারিকভাবে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে (৬৫ বছরের পরে) এবং ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগের সাথে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যেহেতু নারীদেন কর্মযঞ্জ অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা কম থাকে তাই তারাই বেশি আক্রান্ত হন।
ফিজিক্যাল অ্যক্টিভিটিস সম্পর্কে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটল অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূইয়া বলেন, বিভিন্ন প্রকার একসারসাইজ আছে। সহজ একসারসাইজ হচ্ছে হাটা। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে হলে সপ্তাহে ২১০ মিনিট হওয়ার কথা। প্রতিদিন হাটা সম্ভব না, সেখানে আমরা বলি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট। তারও যদি না পারি, ঘাম ঝরে এমন ভাবে অন্তত ১০ মিনিট হাঁটা।
২০২০ সালে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল তিন কোটি, বার্তমানে তিন কোটি ২০ লাখ। যা ২০৩০ সাল নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে তিন কোটি ৮০ লক্ষ গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিস স্টাডি (জিবিডি) ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ।
বাংলাদেশে বছরে দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মারা যায়, যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। ডব্লিউএইচও’র তথ্যমতে বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ অসংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করেন, যার প্রায় অর্ধেক হৃদরোগজনিত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ ক্ষেত্রেও ঝুঁকিটা নারীরই বেশি। সূত্র : বাসস