জনপ্রিয় সংবাদ
- রাজনীতি
- ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মাহাথির মোহাম্মদের দীর্ঘ ও সফল জীবনের রহস্য
- বাংলাদেশ
- ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
নওগাঁয় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- রাজনীতি
- ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
বিএনপির দলছুট সাত্তারকে জেতাতে সরে দাঁড়াচ্ছেন আ.লীগের তিন নেতা
- বাংলাদেশ
- ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মার্কিন তালিম নিয়ে মেয়র দেশে ফিরলে মশক নিধনে নতুন সিদ্ধান্ত
সর্বশেষ ভিডিও
- জীবনযাপন
- ০১ জানুয়ারি, ২০২৪
ডায়েট করেও কমছে না ওজন, যে কারণে
যারা মোটা বা যাদের অতিরিক্ত ওজন তাদের অনেকেই একটা অভিযোগ করেন, ডায়েট করে আর ব্যায়াম করেও শুকাতে পারছেন না তারা, কিংবা ওজন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কিন্তু এমনটা হওয়ার কারণ কী?
‘মোটা’, ‘ওজন বেড়ে যাওয়া’ বা স্থূলতা এই শব্দগুলো শুনলে ঘুরে-ফিরে একটা বিষয় মাথায় আসে। আর সেটা হলো অস্বাস্থ্যকর আর অপরিমিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস এবং আরাম আয়েশের জীবন-যাপন।
ওজন বাড়ার ক্ষেত্রে এগুলো বড় কারণ অবশ্যই। তবে যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা ডায়েট করেও ওজন কমাতে পারছেন না তাদের এই ওজন বাড়ার পেছনে রয়েছে ভিন্ন আরেকটি কারণ।
আর সেটা হলো ‘ওবিসোজিনস’। ওবিসোজিনস হলো এমন এক ধরনের কেমিক্যাল, যা আপনার পরিপাকতন্ত্রে আঘাত হানে এবং অনেক সময় সেক্স হরমোনের ওপরও প্রভাব ফেলে।
কারো শরীরে ওবিসোজিনস বেশি পরিমাণে থাকলে তার শরীরে চর্বি জমার জন্য যে কোষগুলো দায়ী সেই কোষের সংখ্যা ও আকার বাড়িয়ে দেয়। আবার যেসব ব্যাকটেরিয়া চর্বি শোষণ করে, সেগুলোর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এতে চামড়ার নিচে চর্বির আবরণের ঘনত্ব বাড়তে থাকে।
একই সাথে টাইপ টু ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং এই দুটির প্রভাবে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা, স্লিপ অ্যাপনিয়া এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও দেখা দেয়।
লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গে গ্লুকোজ ও ফ্যাটি অ্যাসিড জমতে থাকায় হরমোনের কার্যকলাপেও পরিবর্তন আসে, হজমেও সমস্যা দেখা দেয়।
তবে এই কেমিক্যাল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে যদি কেউ মাতৃগর্ভে বা ছোটবেলায় এই কেমিক্যালের সংস্পর্শে আসেন। তখন সেটা ডিএনএ-এর গঠনকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। এতে ওই ব্যক্তির জিনের বৈশিষ্ট্য, কোষের কার্যকলাপ বদলে যায়। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও প্রভাবিত করতে পারে।
সহজ কথায় ওবিসোজিনসের কারণে মানুষের হজম শক্তি, প্রজনন ও বৃদ্ধি এই তিনটিই বেশি প্রভাবিত হয়।
ওবিসোজিনস কেমিক্যাল কেন বাড়ে?
আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি, এমন অনেক পণ্যে এই ওবিসোজেনিক কেমিক্যাল বা রাসায়নিক উপাদানগুলো রয়েছে।
যেমন ডিটারজেন্ট বা যেকোনো পরিষ্কারক উপাদান, প্রসাধনী বা ব্যক্তিগত যত্নের পণ্য, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বাসন, রান্নার সামগ্রী, পোশাক, খেলনা, চিকিৎসা সামগ্রী ইত্যাদি।
এসব পণ্য আমাদের জীবনের সাথে এমনভাবে জুড়ে আছে যে চাইলেই এর প্রভাব এড়ানো যাবে না।
কিন্তু নিয়মিত এসব পণ্য ব্যবহারের ফলে খাবার, পানি ও বাতাস আরো বেশি দূষিত হচ্ছে এবং মানুষের স্থূলতা ও অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে।
মানুষের শরীরে এমন ৫০ ধরনের ওবিসোজেনিক কেমিক্যাল রয়েছে, যার কোনো একটা বেড়ে গেলে ওজন বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে পাঁচ ধরনের ওবিসোজিনসে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকে।
১.বিপিএ
২.প্যাথালেট
৩.অ্যাট্রাজিন
৪.অর্গানোটিন্স
৫.পিএফওএ
বিপিএ
বিভিন্ন ফুডক্যান, খাবার ও পানীয় পাত্র, পলিকার্বোনেট প্লাস্টিকের সামগ্রী ও ইপোক্সি রেজিনে বিপিএ থাকে। এটা নারীদের সেক্স হরমোন এস্ট্রোজেন, শরীরের চিনির ভারসাম্য রাখা ইনসুলিনের উৎপাদন এবং চর্বির গঠনের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
কেউ যদি বিপিএ-যুক্ত প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার গরম করেন বা গরম খাবার সংরক্ষণ করেন তাহলে মানুষ ওই খাবারের মাধ্যমে বিপিএ-এর সংস্পর্শে আসে।
সব বয়সী মানুষ এমনকি নবজাতকের শরীরেও বিপিএ পাওয়া গেছে। সাধারণত রক্ত, প্রস্রাব, বুকের দুধ ও চর্বি পরীক্ষা করে বিপিএ আছে কিনা জানা যায়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) মতে, খাবারের প্যাকেটে যে পরিমাণ বিপিএ থাকে তা খুবই সামান্য এবং এতে মানবদেহে ক্ষতির ঝুঁকি নেই।
প্যাথালেটস
প্লাস্টিককে টেকসই ও নমনীয় করতে প্যাথালেটস ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত খেলনা, চিকিৎসা সামগ্রী, খাদ্যের প্যাকেজিং, ডিটারজেন্ট, সাবান, শ্যাম্পু, নেইল পলিশ, লোশন ও পারফিউমে প্যাথালেটস পাওয়া যায়।
এই কেমিক্যালটি পুরুষদের যৌন হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের ওপর প্রভাব ফেলে, হজমে সমস্যা তৈরি করে। যার কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিসসহ ওজন বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
সাধারণত প্যাথালেটযুক্ত পাত্র ও প্যাকেজিং এর খাবার খেলে বা এই কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার করলে এমনকি ধুলোবালি থেকেও মানুষের শরীরে এই কেমিক্যাল প্রবেশ করতে পারে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, খাবার প্যাকেটে বা প্রসাধনীতে যে পরিমাণে প্যাথালেট থাকে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
অ্যাট্রাজিন
অ্যাট্রাজিন কেমিক্যালটি ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে মাটি ও পানিতে এই কেমিক্যালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন হরমোনের ওপরে প্রভাব ফেলে। একই সাথে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, জন্মগত ত্রুটি এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
অর্গানোটিন্স
এই কেমিক্যালটি বেশি পাওয়া গেছে পিভিসি পণ্য যেমন পাইপ, নৌকা বা জাহাজে ব্যবহার করা অ্যান্টিফাঙ্গাল পেইন্ট ও কীটনাশকে।
এ কারণে পানিতে ও সামুদ্রিক শামুকে এই কেমিক্যালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
একই সাথে প্লাস্টিক র্যাপ, প্লাস্টিকের খেলনা, স্টেশনারি, কাপড়েও এই কেমিক্যাল পাওয়া গেছে।
যার প্রভাব সেক্স হরমোনের ওপর পড়ে এবং শরীরে চর্বি বাড়তে থাকে।
পিএফওএ
যেকোনো পানিরোধী কাপড় যেমন- রেইনকোট, ছাতা, তাঁবু, ননস্টিক রান্নার সামগ্রী, প্রসাধনী, পরিষ্কারক পণ্য, দাগ প্রতিরোধক, মাইক্রোওয়েভের খাবার এমনকি পানিতেও পিএফওএ পাওয়া গেছে।
এর প্রভাবে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও ওজন বাড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
এই কেমিক্যাল কিভাবে এড়ানো যায়?
ওবিসোজিনস কেমিক্যালের সংস্পর্শ এড়াতে কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- সবার আগে ধূমপান ছাড়তে হবে
- প্যাকেটজাত খাবার ও পানীয় খাওয়া যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে
- প্লাস্টিকের বাসনপত্রের পরিবর্তে কাঁচ, স্টিল বা মাটির পণ্য ব্যবহার
- প্লাস্টিকের পাত্র যদি ব্যবহার করতেই হয় সেটা এসব কেমিক্যালমুক্ত কিনা পরীক্ষা করা, তবে যে প্লাস্টিকই হোক সেটায় খাবার গরম করা যাবে না বা গরম খাবার পরিবেশন করা যাবে না
- কীটনাশক দেয়া খাবার খাওয়া কমানো
- ক্ষতিকর কেমিক্যালমুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা
সূত্র : বিবিসি