জনপ্রিয় সংবাদ
- রাজনীতি
- ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মাহাথির মোহাম্মদের দীর্ঘ ও সফল জীবনের রহস্য
- বাংলাদেশ
- ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
নওগাঁয় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- রাজনীতি
- ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
বিএনপির দলছুট সাত্তারকে জেতাতে সরে দাঁড়াচ্ছেন আ.লীগের তিন নেতা
- বাংলাদেশ
- ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মার্কিন তালিম নিয়ে মেয়র দেশে ফিরলে মশক নিধনে নতুন সিদ্ধান্ত
সর্বশেষ ভিডিও
- জীবনযাপন
- ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শ দরকার : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের
দ্বিতীয়বারের মতো মা হতে চলেছে আফরোজা। তার আগের সন্তানের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। কিন্ত এবার প্রেগন্যান্সির মাত্র চার মাসের মাথায় তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এ নিয়ে পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে একবার করে ডাক্তারের চেকআপে থাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ মাসের মাথায় বাচ্চা মিসক্যারেজ হয়ে যায়।
রাশেদ আর মাহফুজা কয়েকদিন ধরে পরিকল্পনা করছে তারা আরো একটি সন্তান নেবেন। তাদের আগের সন্তানের বয়স এখন সাত বছর। সেই মতে তারা ডাক্তারের সাথে পরামর্শও করল। ডাক্তারও তাদেরকে সাহস দিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাহফুজা গর্ভবতী হলো। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন মাসের মাথায় তার (মাহফুজা) ডায়াবেটিস ধরা পড়ল। ডায়াবেটিস এমন পর্যায়ে গেল যে তাকে প্রতিদিন নিয়ম করে দু’বেলা ইনসুলিন নিতে হয়। অত্যন্ত সাবধানে এবং প্রতিনিয়ত ডাক্তারের পরামর্শে চলার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে একটি সুস্থ ছেলে সন্তানের জন্ম হলো এই দম্পতির।
গবেষণার তথ্য মতে, দেশের শতকরা প্রায় ৩৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিক পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রতি ছয়জন গর্ভবতী মায়ের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মা ও প্রসূতি বিভাগ, ফিটোমেটাল মেডিসিন বিভাগ ও অ্যান্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগ প্রেগন্যান্সি বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে বলা হয়, সন্তান জন্মের ৬ সপ্তাহ পর শতকরা ৫০ শতাংশ গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক হয়নি। আমাদের দেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে মা ও অনাগত শিশু উভয়ইে ঝুঁকির সম্মুখীন। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর কুফল থেকে মা ও সন্তানকে মুক্ত রাখা যায়।
গাইনোকোলজিষ্ট ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগীকে একজন ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। প্রয়োজনে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়। পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকায় মাকে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস সারা জীবন ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় কোনো মায়ের ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। এ ডায়াবেটিস অনাগত নবজাতকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বিএসএমএমইউ মা ও প্রসূতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাসরিন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের খুব নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করতে হয়। আর প্রসূতি মায়েদের যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে আরো অনেক বেশি যত্মশীল হতে হয়। কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের মধ্যে না থাকলে রোগী এবং অনাগত সন্তানের জীবন শঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে সবাইকে আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের গ্রাম এবং শহর এলাকায় সমান হারে বাড়ছে ডায়াবেটিসের রোগী। গত দুই বছরে ৫৬ শতাংশ রোগী বেড়েছে। এছাড়া নিয়মিত চিকিৎসা না করায় ইনসুলিন নেয়ার পরও ৮০ ভাগের বেশি রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০৪৫ সালে তা প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
বিএসএমএমইউ অ্যান্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম বলেন, সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে যে গবেষণা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, দেশে মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। ডায়াবেটিস থেকে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এর মধ্যে প্রধান হলো হৃদরোগ। হৃদরোগের ৮০ শতাংশই রোগী ডায়াবেটিসের কারণে মারা যায়। ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয় ডায়াবেটিসের কারণে। এছাড়া অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগীর ২৯ শতাংশ রেটিনোপ্যাথিতে ভুগছেন। ডায়াবেটিসের কারণে প্রজনন ক্ষমতাও কমছে।
বারডেম অ্যাকাডেমির পরিচালক ও হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো: ফারুখ পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। এ রোগ কখনো সম্পূর্ণ সারে না। সারাবিশ্বেই এই রোগটি আছে। এই উপ-মহাদেশে প্রকোপ কিছুটা বেশি। ডায়াবেটিসের কিছু ঝুঁকি আছে পরিবর্তন করা যায় এবং কিছু যায় না। কারো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বংশে কারো ডায়াবেটিস থাকলে সেক্ষেত্রে অন্যরা কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন ও মেদ বাড়লে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকেন।
সূত্র : বাসস