জনপ্রিয় সংবাদ
- রাজনীতি
- ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মাহাথির মোহাম্মদের দীর্ঘ ও সফল জীবনের রহস্য
- বাংলাদেশ
- ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
নওগাঁয় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- রাজনীতি
- ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
বিএনপির দলছুট সাত্তারকে জেতাতে সরে দাঁড়াচ্ছেন আ.লীগের তিন নেতা
- বাংলাদেশ
- ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মার্কিন তালিম নিয়ে মেয়র দেশে ফিরলে মশক নিধনে নতুন সিদ্ধান্ত
সর্বশেষ ভিডিও
- জীবনযাপন
- ০৭ নভেম্বর, ২০২৩
পার্কিনসন রোগ নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কে পেসমেকার
পার্কিনসন রোগ অনেক মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটিয়ে চলেছে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড ঢুকিয়ে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী রদবদল ঘটানোর সুযোগ এই প্রযুক্তিকে আরো বাস্তবসম্মত করে তুলছে।
বয়স মাত্র ৪০-এর মাঝামাঝি হওয়া সত্ত্বেও টিম সাইডেলের পার্কিনসন রোগ ধরা পড়েছে। কড়া ডোজের ওষুধ সত্ত্বেও কাঁপুনি দূর হচ্ছে না। মস্তিষ্কের গভীরে স্টিমুলেশন এখন তার একমাত্র আশা। ওই অপারেশনের সময়ে তাকে সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে, এমনকি কথাও বলতে হবে। মস্তিষ্কের গভীরে ইলেকট্রোড ঢোকানো হবে।
এক দিন আগেই তিনি হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। অপারেশন নিয়ে মনে কোনো ভয় নেই। শুধু এই দশা থেকে মুক্তির আশা রয়েছে। টিম সাইডেল নিজের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, ‘আমার কাঁপুনি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শীতের কারণে নয়, এটা শরীরের কম্পন। হাতের লেখা খারাপ হচ্ছে, অবসর সময়ে কিছুই করতে পারছি না, স্ত্রীর সাথে বাইরে খেতে যাওয়াও কঠিন।
তিনি আরো বলেন, প্রথম আলাপের পর অনেক মানুষ ভাবেন, আমি হয়তো তিন পর্যন্তও গুনতে পারি না। তারা আমাকে সহজ বিষয়ও বোঝানোর চেষ্টা করেন।’
পার্কিনসনের কারণে তাকে নিজের কাজও কমাতে হয়েছে। কাজের সূত্রে ভ্রমণ বন্ধ হয়ে গেছে। ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। রোগের কারণে ডোপামিনের অভাব মেটাতে যে ওষুধ খেতে হচ্ছে, সেগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তাকে কাবু করে রাখছে।
ট্যুবিঙেন শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরে মস্তিষ্কের গভীরে স্টিমুলেশন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ব্রেন পেসমেকারের ভালো দিক হলো, সেটির মৃদু বৈদ্যুতিক স্পন্দন বার বার নতুন করে বদলানো যায়। রোগ আরো গুরুতর হলে বা লক্ষণ বদলে গেলে সেটা করা যায়। সেই পরিবর্তন দ্রুত শনাক্ত করতে সম্প্রতি স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে কম্পন, সঞ্চালন, ঘুম ইত্যাদি পরিমাপ করা হচ্ছে।
ট্যুবিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ আলিরেজা গারাবাগি বলেন, ‘এখন হাত দেখতে পাচ্ছেন, যেটি নড়াচড়া করছে। হাতের ঠিক এই ছোট সঞ্চালনই রেকর্ড করে ধারণ করা হচ্ছে। এটা অনেকটা দীর্ঘমেয়াদী মনিটরিংয়ের মতো।’
গোটা বিশ্বে হাজার হাজার পার্কিনসন রোগীর মস্তিষ্কে এই অপারেশন করা হয়েছে। কোনো রক্তপাত ছাড়াই সেটা সম্ভব। শুধু ইলেকট্রোড ঢোকানোর সময়ে মাথার খুলিতে ছোট ছিদ্র করতে হয়।
কম্পিউটার টোমোগ্রাফি ছবির ভিত্তিতে পরিকল্পনা করে বাকি কাজ নিপুণ হাতে করতে হয়। ইলেকট্রোড নির্দিষ্ট জায়গায় বসানো হয়েছে কিনা, অপারেশন থিয়েটারে পরিমাপ চালিয়ে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হয়।
আলিরেজা গারাবাগি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে ক্রমাগত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে। দিনের বিভিন্ন সময়ের তারতম্য সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। সকালে বা বিকেলে অবস্থা ভালো না খারাপ হয়, সে বিষয়ে ধারণা পাচ্ছি। কোনো রোগী মাঝারি বা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কোনো নতুন সেটিং থেকে উপকার পাচ্ছেন কিনা, তাও জানতে পারি।’
থেরাপিতে টিম সাইডেলের উপকার হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী রদবদলের জন্য তাকে আরো আট সপ্তাহ হাসপাতালে আসতে হবে। উরোলজিস্ট হিসেবে ডানিয়েল ভাইস প্রথমেই তার ব্রেন পেসমেকার বন্ধ করে রোগের লক্ষণ বিষদভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। বোতাম টিপলেই কম্পন বন্ধ হয়ে যায়।
টিম সাইডেল নিজের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটা ঘটে। চালু বা বন্ধ করার পরেই প্রভাব বোঝা যায়। ট্যাবলেটের মতো অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয় না। আমার খুব ভালো লাগছে। এই চিকিৎসায় কাজ হয়েছে।
সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো, ভবিষ্যতে তাকে আর ঘনঘন হাসপাতালে যেতে হবে না। কারণ বাসা থেকেই রিমোট পদ্ধতিতে তার ব্রেন পেসমেকারের সেটিং বদলানো সম্ভব হবে।
গত কয়েক দিনে কম ওষুধ খেতে হয়েছে। কম্পনও অনেক কমে গেছে। হাসপাতাল থেকেই তার ইমপ্লান্ট করা পেসমেকার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। অবশ্যই কড়া তথ্য সুরক্ষা আইন মেনেই সেই ব্যবস্থা হয়েছে।
নিউরোলজিস্ট ডানিয়েল ভাইস বলেন, ‘তাহলে এবার এমন করা যায়। আজ আমরা স্টিমুলেটার আবার হালকাভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছি। এই রিমোট কানেকশন দিয়েই আমি সেটা করতে পারি। দেখা যাক কী হয়।’
টেলিফোনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক ইমপাল্স পাঠানো কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কল্পবিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হতো। এই প্রযুক্তির দৌলতে টিম সাইডেল তার পুরানো জীবন আপাতত ফিরে পেয়েছেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে