• স্থানীয় সংবাদ
  • রাজনীতি
  • বিনোদন
  • বাংলাদেশ
    • রাজধানী
    • জেলা
    • অপরাধ
  • জীবনযাপন
  • আন্তর্জাতিক
    • ভারত
  • সারাদেশ
  • খেলাধুলা
    • ফুটবল
  • বিশ্ব
    • মধ্যপ্রাচ্য
  • Search
জনপ্রিয় সংবাদ
  • রাজনীতি
  • ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মাহাথির মোহাম্মদের দীর্ঘ ও সফল জীবনের রহস্য
  • বাংলাদেশ
  • ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
নওগাঁয় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
  • রাজনীতি
  • ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
বিএনপির দলছুট সাত্তারকে জেতাতে সরে দাঁড়াচ্ছেন আ.লীগের তিন নেতা
  • বাংলাদেশ
  • ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মার্কিন তালিম নিয়ে মেয়র দেশে ফিরলে মশক নিধনে নতুন সিদ্ধান্ত
সর্বশেষ ভিডিও
  • বাংলাদেশ
  • ০৫ নভেম্বর, ২০২৩

কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘হারানো’ ধান লক্ষ্মীদিঘা

বছরের আট মাস একরের পর একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। তলিয়ে থাকে এক মানুষসমান পানির নিচে। যুগ যুগ ধরে লোকে তা–ই দেখে এসেছে। দু–তিন বছর ধরে চেনা সেই দৃশ্য খানিকটা পাল্টেছে। পানির ওপর এখন সবুজ ধানের শিষ দোল খায়। দোলে কৃষকের স্বপ্নও। নওগাঁর কৃষকদের এমন স্বপ্ন দেখাচ্ছে প্রায় হারিয়ে যাওয়া দেশি জাতের ধান—লক্ষ্মীদিঘা। পানিতে ডোবে না; বরং পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে।

নওগাঁ সদর উপজেলায় কয়েকটি বিলে এবার ১১০ একর জমিতে চাষ হয়েছে লক্ষ্মীদিঘা ধানের। সেখান থেকে ১০০ টন ধান পাবেন বলে আশা কৃষকদের। বৈশাখ থেকে কার্তিক মাস অবধি যে জমিতে কোনো ধান হতো না, সেই জমিতে এখন ফলছে সোনার ফসল। কৃষকদের স্বপ্নজাগানিয়া এই ধান হারিয়ে যেতে বসেছিল। গোপালগঞ্জ থেকে এই জাতের ধানের বীজ জোগাড় করে নওগাঁর বিলের জমিতে বপনের ভাবনাটা এসেছিল হাসান জামান সিদ্দিকীর (৫৮) মাথা থেকে। তিনি একজন কৃষক। চুক্তি মেনে (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জিরা ধানবীজ সরবরাহ করেন। নওগাঁ সদরেই তাঁর বাড়ি।

পুষ্টিগুণ বেশি
             এই ধানের চাল লাল হয়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে বাজারে এর দামও বেশি।
             শামসুল ওয়াদুদ, অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহী


বোরো ধান কাটার পর বৈশাখ মাসের দিকে একটা চাষ দিয়ে এই ধানের বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়। মই দেওয়ারও দরকার পড়ে না। আর জমি নরম থাকলে চাষেরও দরকার হয় না। শুধু ছিটিয়ে দিলেই হয়। এমনকি কোনো সার–কীটনাশকও লাগে না। আপনা–আপনি বেড়ে ওঠে। বিলে ছয় ফুটের মতো পানি হয়। ধানগাছ তার চেয়েও বড় হয়। কার্তিক মাসের দিকে কাটা হয় ধান।

সফল হলে ১০ হাজার একর বিলে ছড়িয়ে পড়বে এই ধান। উৎপাদন হবে ১০ হাজার টন—এমনটাই মনে করে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

লক্ষ্মীদিঘা ধানের পুষ্টিগুণ বেশি বলে জানালেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ। গত বছর নওগাঁয় লক্ষ্মীদিঘা ধান কাটার সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই ধানের চাল লাল হয়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে বাজারে এর দামও বেশি। আমি এখন এই চালের ভাতই খাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে হাসান জামান জানান, গত বছর প্রতি কেজি লক্ষ্মীদিঘা চাল তিনি অনলাইনে ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছেন।

যেভাবে ধানের সন্ধান

হাসান জামান পড়াশোনা করেছেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। কিন্তু ধ্যানজ্ঞান তাঁর কৃষি। ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ ছিল। চাকরিবাকরির দিকে মন দেননি। শুরুতে ঠিকাদারি করেছেন। তারপর কৃষিতেই জড়িয়ে পড়েন।

আট বছর আগে তিনি জিরা ধানবীজ উৎপাদন ও সরবরাহের কাজ শুরু করেন। এই কাজ করতে গিয়েই তাঁর মাথায় বিলের পতিত জমিতে আবাদের চিন্তা আসে। এরপর তিনি পানিতে হয়, এমন ধানবীজ খুঁজতে থাকেন। নীলফামারীর এক চাষির কাছ থেকে পেয়েও যান সেই ধানের সন্ধান। পরে কাঙ্ক্ষিত ধানটি পান গোপালগঞ্জের আরেক কৃষক আরিফুজ্জামানের কাছে। তাঁর কাছ থেকে ১২০ কেজি লক্ষ্মীদিঘা ধান নিয়ে আসেন হাসান জামান। ধানটি যে লক্ষ্মীদিঘাই, তা নিশ্চিত করেন লুপ্ত ধানবীজের সংগ্রাহক ও রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত রাজশাহীর তানোরের ইউসুফ মোল্লা।

হাসান জামান এবার চাষিদের বোঝালেন তাঁদের জমি বছরের আট মাস পড়েই থাকে। তিনি তাতে নতুন ধান চাষের পরীক্ষা করবেন। সফল হলে তাঁদের বীজ দেবেন। তাঁরা নিজেরাও তখন চাষ করতে পারবেন। কৃষকেরা রাজি হলেন।

সহজ ছিল না শুরুটা

নিজের টাকায় জমি সাফসুতরো করলেন হাসান জামান। চারা তৈরিতে লাগল ২৮ বিঘা জমি। আর ছিটিয়ে দিলেন ১০ বিঘায়। কিন্তু পানির স্রোতে কচুরিপানা ঢুকে, মাছ ধরতে লোকজন জমিতে ঢুকে ২৮ বিঘার ধান নষ্ট করে দেয়। মাঠে আর কোনো ধান না থাকায় বাকি ১০ বিঘা জমির ধানে পোকার আক্রমণ হলো। ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮২৫ টাকা খরচ করে ধান পেলেন মাত্র ১৭ মণ। সে ২০২১ সালের কথা।

পরের বছর ১০০ বিঘার কিছু বেশি জমিতে চাষ করলেন। রোপণ করা ধান ভালো হলো। কিন্তু এলাকার লোকজন হাঁস ছেড়ে দিলেন। হাঁস পাকা ধান খেয়ে শেষ করে দিল। জাল দিয়েও ঠেকানো গেল না। লোকজনকে বোঝানোও গেল না। সেবার ধান পেলেন ৩০৩ মণ।

এ বছর ৬টি বিলে ৭০ একর জমি চাষের জন্য কৃষকদের ৫০ মণ বীজধান দেন হাসান জামান। তিনি নিজে পাঁচির বিলে ৪০ একর জমিতে লক্ষ্মীদিঘার চাষ করেছেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, উদ্যোগটা ভালো। তাঁর জেলায় বোরো চাষের পর প্রায় ১০ হাজার একর জমি পতিত থাকে। এই জমিতেই লক্ষ্মীদিঘা ধান হচ্ছে। সঙ্গে শর্ষেও করা যাচ্ছে।

তিন ফসলের চাষ

নওগাঁ সদর, রানীনগর, মান্দা, নিয়ামতপুর ও আত্রাই উপজেলায় অন্তত ৫০টি বিল আছে। এসব বিলে শুধু বোরো ধান হয় মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে। লক্ষ্মীদিঘা ধান চাষ করা হলে সে ধান থাকবে কার্তিক মাস পর্যন্ত। ধান কাটার পর হবে দেশি শর্ষের চাষ। শর্ষে তুলে অনায়াসে বোরো ধান রোপণ করা যাবে। এতে এক ফসলি পতিত বিলে হয়ে যাবে তিন ফসলি, জানালেন হাসান জামান।

গত ২৮ অক্টোবর নওগাঁ সদরের পাঁচির বিলে দেখা হয় কৃষক আবদুল আলীমের (৪৮) সঙ্গে। তিনি হাসান জামানের কাছ থেকে বীজ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। নিজের জমিতে নেমে ধানের গোছা টেনে তুললেন। দেখা গেল ধানের গাছ তাঁর মাথা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বোঝা গেল বিলে এক মানুষসমান পানি হলেও ধান ডুববে না।

পাঁচির বিলেই কথা হয় গৃহবধূ নাসিমা বেগমের সঙ্গে। তাঁর স্বামী বিলে মাছ ধরছিলেন, পাশেই তিনি বসেছিলেন। বিলে লক্ষ্মীদিঘা ধান দেখিয়ে এই নারী বললেন, ‘এই বিলে এক জ্যৈষ্ঠে আবাদ হয়। আবার পরের জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত ডুইবি থাকে। মাইষসের কী কষ্ট! এই ধান হলে মানুষ বাঁচপি।’

Welcome Image

© 2025.Natore News portal | Website Design & Developed by Glossy IT