
পরিবারের সদস্যটি থেকে শুরু করে পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই হয়তো বিছানায় শয্যাশায়ী। তিনি হয়তো দূরারোগ্য রোগে ভুগছেন। চিকিৎসা চলছে। কিন্তু মৃত্যুর দিন গুনছেন। এই মানুষগুলোর সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়? কি ধরনের কথা বলতে হয়? এগুলো মানুষ সহজাতভাবেই বোঝে। সফটওয়্যার ডেভেলপার পিয়েটার হিন্টজেনস টারমিনাল ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এই ভোগান্তি থেক মুক্তি পেতে তিনি স্বেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন। এই পদ্ধতি ২০০২ সাল থেকে বেলজিয়ামে বৈধতা পেয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের জন্যে কিছু রীতি-নীতির কথা উল্লেখ করে গেছেন। মৃত্যুপথযাত্রী কোনো মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত তার শিক্ষাও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। এখানে পিয়েটার কি বলেছেন তা দেখে নেওয়া যাক।
১. তার পাশে সময় কাটান। তার কিছু আশা রয়েছে। তিনি যুদ্ধ করতে চান। অথবা তিনি মৃত্যু কামনা করেন। এটা সম্পূর্ণ তার ইচ্ছা।
২. বাস্তবতার বিরুদ্ধে কথা বলতে যাবেন না। যেমন- তাকে বলার প্রয়োজন নেই যে, আপনি যুদ্ধ করতে থাকেন। মৃত্যুর কাছে হার মানা যাবে না ইত্যাদি।
৩. আবার এও বলবেন না যে, আপনি অবশ্যই রোগটাকে হারাতে পারবেন। এটা আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় ঠিকই। কিন্তু মিথ্যা আশাবাদ কখনো ওষুধের মতো কাজ করে না।
৪. এ চিকিৎসায় কাজ না হলেও আরো উপায় রয়েছে। যার মাধ্যমে এমন রোগে অনেক মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ জাতীয় কথা-বার্তা আশা জাগানিয়া। কিন্তু বেঁচে থাকার বিষয়টি লটারির ওপর ফেলে দেওয়া উচিত নয়। আমরা বাঁচি এবং মৃত্যুবরণ করি।
৫. পাশে ক্রমাগত ছোটখাটো বিরক্তিকর বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা বন্ধ করতে হবে। যেমন- আপনার কি সমস্যা হচ্ছে? কথা বলতে অসুবিধা বোধ করছেন? আসলে রোগীর কেমন লাগছে তা তিনি নিজেই বুঝে বলবেন। তা ছাড়া তাকে দেখে বা রোগের কথা শুনে তার সামনেই কান্না-কাটি করা উচিত নয়। এতে রোগী আরো ভয় পেয়ে যান। সমবেদনা জানাতে পারেন।
৬. রোগীর সঙ্গে পুরনো কোনো মধুর স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। এতে রোগী অনেক শান্তি বোধ করবেন।
৭. রোগী তার বিছানায় শুয়ে আছেন, বিশ্রাম নিচ্ছেন, সময়মতো ওষুধ-পথ্য নিচ্ছেন- এসবই তার ভালো হয়ে ওঠার জন্যে এক ধরনের ক্রিয়ানুষ্ঠান। রোগীকে পরিস্থিতিকে এভাবেই ব্যাখ্যা করুন।
৮. কৌশলী কথা-বার্তা চলতে পারে। ক্ষণস্থায়ী জীবন সম্পর্কে কথা বলতে পারেন। তার চারদিকের মানুষ সম্পর্কেও বলতে পারেন।
৯. আমি তোমার বইটি কিনেছি। এমনভাবে বলা হলো, যেন বইটি রোগী লিখেছেন। আসলে এমন কথার মাধ্যমে তাকে একটু খুশি করা হয়। অথবা তার দিকে আপনার খেয়ালের জানান দিলেন। সুখকর কথা-বার্তা ছাড়া অন্য কিছু বলার প্রয়োজন নেই।
১০. রোগীর সামনে নিজের সুখের কথাও প্রকাশ করুন। খারাপ খবর শুনলে তিনিও অস্থিরতায় ভুগবেন।
১১. রোগীর মন থেকে নৈরাশ্য ও ভয় যতটা সম্ভব দূর করুন। তাকে মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়ার পেছনে যত বাধা আছে তাও দূর করে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
১২. বাস্তবিক চিন্তা করুন। আশা প্রদান কখনো ওষুধ নয়।
১৩. যে রোগের শেষ পরিণতি খুব খারাপ হয়ে যায়, তার সম্পর্কে কোনো কথা বলবেন না। বরং রোগী যতটুকু জানেন তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন।
১৪. রোগে ভুগে মৃত্যু হার নয়। এটা কোনো ব্যর্থতাও নয়। কাজেই রোগীর পরিণতি নিজেও মেনে নিন।