মেসি-রোনালদো পরবর্তী ফুটবল বিশ্ব যে কিলিয়ান এমবাপ্পে নামের এক ১৯ বছরের তরুণের হাতের মুঠোয় থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরষ্কারের পাশাপাশি পেলের পর দ্বিতীয় টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের নক আউট ম্যাচে জোড়া গোল করার কীর্তিও গড়েছেন। কিন্তু এই এমবাপ্পেই শুরুর দিকে কয়েকটি ফুটবল ক্লাব থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।
মজার বিষয় হচ্ছে, শুধু এমবাপ্পেই নন, এরকম প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছেন বর্তমান ফুটবলের বেশ কয়েকজন নামকরা তারকা। আজ আমরা জানবো এমনই কয়েকজন ফুটবলারের গল্প।
হ্যারি কেইন
মাত্র ২৪ বছর বয়সেই ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেছেন হ্যারি কেইন। বর্তমান ফুটবলের কয়েকজন বাঘা বাঘা স্ট্রাইকারের মধ্যে একজন এই টটেনহাম খেলোয়াড়। অথচ এই হ্যারি কেইনের প্রতিভা নিয়ে সংশয় ছিলো। তা-ও আবার টটেনহ্যামের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনালের।

হ্যারি কেইন; Image Source: Famous People
আতোঁয়ান গ্রিজম্যান
অন্যান্য অনেক ফরাসির মতোই ছোটোবেলা থেকেই পেশাদার ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা ছিলো গ্রিজম্যানের। কিন্তু বিধিবাম! একের পর এক ক্লাবে ট্রায়ালের পরও কেউই থাকে সাইন করাতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। সর্বপ্রথম অলিম্পিক লিঁওর হয়ে ট্রায়াল দেন। কিন্তু বয়সের তুলনায় খাটো ও পাতলা ছিলেন বিধায় তার ফুটবল খেলার জন্য শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে লিঁও।

আতোঁয়ান গ্রিজম্যান; Image Source: Famous People
মিশেল প্লাতিনি

প্লাতিনি; Image Souce: Wikimedia Commons
রুদ খুলিত
এফসি হারলেম নামের এক ক্লাবের হয়ে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন রুদ খুলিত। একবছর সেখানে খেলার পর ট্রায়াল দিতে যান আর্সেনালে। কিন্তু তৎকালীন আর্সেনাল কোচ টেরি নেইল রুদ খুলিতকে অলস ও বিশৃঙ্খল বলে আখ্যা দেন। এই অজুহাতের জের ধরে রুদ খুলিতের পেছনে ২ লাখ ইউরো খরচ করতে রাজি ছিলেন না তিনি।

রুদ খুলিত; Image Source: Famous People
কিলিয়ান এমবাপ্পে
বিস্ময়কর হলেও সত্যি, কিলিয়ান এমবাপ্পেকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো ইংলিশ ক্লাব চেলসি।

কিলিয়ান এমবাপ্পে; Image Source: allstarbio.com
বর্তমানে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এমবাপ্পে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ক্লাব পর্যায়ে করে ফেলেছেন ৬০ এর উপর গোল।
ফ্রাঙ্কো বারেসি
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারদের মধ্যে একজন বারেসি পড়েছিলেন ইন্টার মিলানের বাতিলের খাতায়। ১৯৭৪ সালে ১৪ বছর বয়সী বারেসি বড় ভাইয়ের দেখানো পথে হেঁটে ইন্টার মিলানে ট্রায়াল দেন। সেই সময় বারেসির বড় ভাই ছিলেন ইন্টারের একাডেমির সদস্য। কিন্তু ইন্টার মিলান তাকে ফিরে যেতে বলে এবং এক বছর পরে যোগ দিতে বলে। আর এই সুযোগটাই লুফে নেয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলান। বারেসিকে রোজানেরিরা দলে ভেড়ায় সেই বছরই।

Image Surce: thesefootballtimes.co
গুইসেপ্পে মিয়াজ্জা
ইতালিতে ইতিমধ্যেই তার নামানুসারে তৈরি স্টেডিয়ামই বলে দেয় ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবলারদের একজন তিনি। ১৩ বছর ধরে ইন্টার মিলানে খেললেও শুরুতে মিয়াজ্জা চেয়েছিলেন পছন্দের ক্লাব এসি মিলানের হয়ে খেলার। নিজের পছন্দের ক্লাব একাডেমি ভর্তি হন মাত্র ১৩ বছর বয়সেই। কিন্তু কিছুটা হালকা-পাতলা থাকায় তার শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দেয় এসি মিলান কোচিং স্টাফদের মাঝে। তাই মিয়াজ্জাকে তারা বাতিলের খাতায় ফেলেন।

Image Source: sportskeeda.com
লিওনেল মেসি
আতোঁয়ান গ্রিজম্যানের মতো লিওনেল মেসিকেও শুনতে হয়েছে দেখতে ছোটখাটো হওয়ায় ফুটবল খেলা সম্ভব না তার পক্ষে। নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে খেলার সময় আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভারপ্লেটের সামনে সুযোগ ছিলো মেসিকে সাইন করানোর। কিন্তু প্রতি মাসে হরমোনজনিত সমস্যার কারণে মেসির পেছনে ৫০০ ডলার খরচ করতে রাজি হয়নি রিভারপ্লেট। ফলশ্রুতিতে নিউওয়েলসেই থেকে যান মেসি।

Image Source: World Biography Sites
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
২০০৩ সালে আর্সেনাল কোচ আর্সেন ওয়াঙ্গারের সামনে সুযোগ ছিলো তরুণ ক্রিস্টিয়ানোকে দলে ভেড়ানোর। কিন্তু স্পোর্টিং লিসবনের চাহিদা মতো দাম দিতে অপারগতা প্রকাশ করে আর্সেনাল।

Image Source: Famous Biographies
পরবর্তীতে ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে আর্সেন ওয়েঙ্গার জানিয়েছিলেন, রোনালদোকে সাইন করাতে না পারা তার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস হয়েই থাকবে।
রোনালদো দ্য ফেনোমেনন
একেবারে ছোটবেলায় ক্যারিয়ারের শুরুতেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন রোনালদো। রিও ডি জেনেইরো তে জন্মগ্রহণ করায় ছোটবেলা থেকেই রোনালদোর স্বপ্নের ক্লাব ছিলো ফ্ল্যামেঙ্গো। পাশাপাশি নিজের ফুটবল আদর্শ জিকোও খেলেছিলেন ফ্ল্যামেঙ্গোতে। জিকোর পদক্ষেপ অনুসরণ করে ফ্ল্যামেঙ্গোতে ট্রায়াল দিতে যান রোনালদো।

Image Source: networthier.com
তবুও ভাগ্য ভালো যে আরেক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জেয়ারজিনহোর চোখে পড়েন তিনি। জেয়ারজিনহোই রোনালদোকে নিয়ে আসেন ক্রুজেইরোতে। সেখান থেকে রোনালদো বার্সা, রিয়াল, মিলানসহ মাতান পুরো বিশ্বকেই।